অপদেবতার বিশ্বাসঘাতকতা (হরর অনুগল্প)

ভেলায় ভাসানো দেহটা নদীর কিনার ঘেষে ভাসতে ভাসতে জংলার ধারে একটু কম পানিতে আটকে গেলো। প্রায় মৃত দেহটা দেখে বোঝার উপায় নেই তাতে প্রাণ-পাখি আছে নাকি উড়ে গেছে। আজকাল প্রায়ই এমন অর্ধমৃত কিংবা মৃত দেহ পানিতে ভাসমান দেখা যায়। মহামারিতে আক্রান্ত এমন হাজারো মৃত্যুপথযাত্রী অসুস্থকে তার প্রিয়জনেরা ভেলায় করে ভাসিয়ে দিচ্ছে কবিরাজ কিংবা উপাসকদের কথায়। মহামারীতে আক্রান্ত বলে এইসব ভাসমান দেহ নিয়ে মানুষের আগ্রহ থাকলেও সাহস করে কেউ ধারে-কাছে ভীরে না।

ওদিকে বৃদ্ধা ওঝা বুড়ির শেষ ক্ষমতাটা হাসিল করতে আর একটা মাত্র যুবতী মেয়ের দরকার ছিলো। আমাবস্যা ঘনিয়ে আসলেও দেবতার নামে বলি দেবার জন্যো ২১ তম যুবতি সে খুঁজে পাচ্ছিলো না। তাই বিকেলের দিকে যখন শুনলো একটা লাশ জংলার পাড়ে আটকে আছে তখনই তার চোখের মনি ঝক করে উঠলো।

নিশুতি নামার পর ধীরে ধীরে ওঝা বুড়ি গিয়ে পৌছলো জংলার ধারে। নিজের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসলো সে, বৃদ্ধ ওঝা বুড়ি ভেতর থেকে ৬ হাতার ডায়নীর রূপটায় পরিবর্তন আনতে তাকে বেশ কিছু বলি চড়াতে হয়েছে। আর আজ হয়তো এই বলিটা দিতে পারলে দেবতার প্রতিশ্রুতি মত হারানো যৌবন আর আস্বাভাবিক ক্ষমতার মালিক বনে যাবে।

এক নজর বুলিয়েই বুঝলো ভাসমান দেহটা মৃত নয়। তবে মাথাটা একটা চটের ব্যাগ দিয়ে বাধা। মনে হয় ওঝার নির্দেশেই এভাবে চটের ব্যাগে মাথা বেধে তারপর ভেলায় ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। আহারে! ওরা যদি বুঝতো হঠাৎ কেনো এই মহামারি নেমে আসলো এদের ওপর!

চটের ব্যাগ থেকে মাথাটা বের করতেই ডায়নী ওঝার মুখ থেকে একটা চিৎকার প্রায় বের হয়ে যাচ্ছিলো, কিন্তু কিছু একটা তার চিৎকারটাকে মাঝপথেই আটকে দিলো। ডায়নী বুড়ির দেবতা তার চোখের সামনে পড়ে থাকা ভেলাতেই ভাসছে। আর তার চুল গুলো সাপের ন্যায় ডায়নী বুড়ীর মুখ আর গলা গলিয়ে ভেতর অব্দি চেপে ধরে আছে।

দেবতা তাকে ক্ষমতা দেবার জন্যে নয়, বরং তার নিজের অভিষাপ ভেঙ্গে মর্তলোকে নিজের রাজত্ব কায়েম করতে জাহান্নাম হতে উঠে এসেছে। আর দেবতার ঐ অভিষাপের শেষ হবে এক ডায়নীকে তার নিজের স্থানে অদলবদলের মাধ্যমে, যা আর কিছুসময়ের মাঝেই হতে যাচ্ছে।

ক্ষমতা আহরণের লোভে পড়ে ডায়নী বুড়ী কোন অপশক্তিকে যে দুনিয়ার বুকে নিয়ে আসলো তা যদি ক্ষুনাক্ষরেও সে ধারণা করতে পারতো তবে এই পথ সে কখনোই মাড়াতো না…